1

Ticker

6/recent/ticker-posts

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি বিএনপির

 



ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি বিএনপি


২০১৪ সালের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন, ২০১৮'র রাতের ভোট এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনে ভোটাধিকার বঞ্চিত হয়েছে দেশের মানুষ। আওয়ামী

নেতাকর্মীদের বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখছেন বেগম খালেদা জিয়া

সরকারের বিরুদ্ধে দেশের মানুষের ক্ষোভের অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে এটিও ছিল অন্যতম। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগকে বিতাড়িত করার পর তাই দেশের মানুষ একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও জানিয়েছেন এবারের নির্বাচন হবে স্মরণকালের

সর্বশ্রেষ্ঠ সুষ্ঠু নির্বাচন। তবে নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য ফুটে উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে চলতি বছর ডিসেম্বর কিংবা আগামী বছরের মাঝামাঝি নির্বাচনের সম্ভব্য সময় হিসেবে জানানো হয়েছে।

আর বিএনপিসহ তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সকল রাজনৈতিক দল যতদ্রুত সম্ভব নির্বাচন দাবি করে আসছে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দলটি ইতোমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছে। নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে নির্বাচন আদায়েও সোচ্চার হয়ে উঠেছে বিএনপি। এলক্ষ্যে ইতোমধ্যে যুগপৎ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের

আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছে। প্রয়োজনে সরকারের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি কর্মসূচিতে যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন এসব বৈঠকে উপস্থিত নেতারা। বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর নেতারা বলেন, বর্তমান সরকার সার্বিক পরিস্থিতি ঠিকভাবে সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এতো দিনেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি সরকার। এছাড়া সরকারের ভেতরে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসরদের কারণে গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ একের পর এক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এছাড়া অনির্বাচিত ও দুর্বল সরকার হওয়ার কারণে নানা ধরণের দাবি-দাওয়া ও আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তো আছেই। তাই বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে দ্রুত একটি নির্বাচন প্রয়োজন।

এদিকে নির্বাচনের দাবির পাশাপাশি বিএনপির হাইকমান্ড ইতোমধ্যে দলের নেতাকর্মীদের যার যার এলাকায় মানুষের মন জয় করতে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদেরও জানিয়ে দেয়া হয়েছে এবার ক্লিন ইমেজের প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেবে বিএনপি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা বলছি প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো দ্রুত শেষ করে যেন নির্বাচন দেয়া হয়। কারণ দ্রুত নির্বাচন হলে অনেক সঙ্কট দূর হয়ে যাবে। নির্বাচন হলে বৃহৎ শক্তি হবে, যে সরকার, পার্লামেন্ট থাকবে সেটি অনেক শক্তিশালী হবে। যে সংকটগুলো সৃষ্টি হয়েছে সেইগুলো দূর হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, নির্বাচনের পরে আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ জাতীয় সরকার করতে চাই, সবাই মিলে রাষ্ট্রের সকল সমস্যার সমাধান আমরা করতে চাই। যারা আমাদের দলে আছেন, অন্যান্য যেসব দল আছেন তারা এটা ভাববেন, চিন্তা করবেন। আমি বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা সমর্থন দিযেছি, সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই আলোচনার মাধ্যমেই এই বিষয়টি এগিয়ে নিতে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ এবং সবার মনে প্রশ্ন আছে ও আলোচিত হচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে- নির্বাচন। কবে নির্বাচন হতে যাচ্ছে? আমাদের পক্ষ থেকে আমরা যেটা বলে আসছি, এই বছরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। অন্য কোনো ভাবনার দিকে না গিয়ে সরাসরি জাতীয় নির্বাচনের দিকে গিয়ে দেশে আগামীদিনে একটা নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য।

তিনি বলেন, অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি দেশ বেশিদিন চলতে পারে না। অগণতান্ত্রিক সরকারের রাজনৈতিক ওয়েট থাকে না, মবিলাইজেশন প্রসেস থাকে না, জনগণের সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকে না। জনগণের কাছ থেকে কোনো ফিডব্যাক পাওয়া যায় না। সুতরাং একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যত তাড়াতাড়ি ফিরে যাওয়া সম্ভব সেদিকে আমরা জোর দিচ্ছি। দ্রুত নির্বাচন ইস্যুতে শরিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে বিএনপি। এসব বৈঠকে জোট ও দলের নেতারাও নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির সাথে ঐক্যমত প্রকাশ করেছে।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের এখন মূল বিষয় হচ্ছে একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা না করলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামা হবে।

অলি আহমদ বলেন, আমরা সংস্কার চাই। তবে সংস্কারের কোনো আলামত দেখছি না। গত ৬ মাসে কোনো দুর্নীতিবাজ, লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। আশানুরূপ সংস্কার কাজে অগ্রগতি না হওয়ায় জাতি হতাশ। জাতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে অনেক কিছু আশা করেছিলো। আমি মনে করি তারা অপারগ। তাদের সেই দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও কর্মস্পৃহা নেই।

প্রথম পৃষ্ঠার পর

জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার বিদায় নিয়েছে সত্য, কিন্তু নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। হাসিনা সরকারের প্রেতাত্মারা এখনো সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিরাজ করছে এবং নানামুখী সমস্যার সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, কতগুলো নন ইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে রাজনীতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেখানে জাতীয় নির্বাচনের বিষয় সামনে আসার কথা, তা না এনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা কেন সামনে আনা হচ্ছে। কার স্বার্থে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয় সামনে আসছে। জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত হলে নতুন করে ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের ডালপালা গজাবে। পতিত স্বৈরাচার আবারও পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে। শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদবিরোধী যে লড়াই আমরা শুরু করেছি সেটা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। এদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। এ ব্যাপারে আমাদের সকল রাজনৈতিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকবে।

তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনোকিছুই সমাধান করতে পারছেন না। সংস্কার করার যোগ্যতা এই সরকারের নেই। তাই অবিলম্বে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা উচিত। জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, জনগণ যা চায় তা বুঝে অবিলম্বে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যেই নির্বাচন দিতে হবে। দলের সার্বিক বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখছেন খালেদা জিয়া: ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ৬ আগস্ট প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এরপর থেকেই তিনি দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সাক্ষাৎ দিতে শুরু করেন। এছাড়া এখন তিনি দেশ ও দলের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজ-খবর রাখছেন। ছেলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের শীর্ষ নেতাদেরকে দিচ্ছেন দিক-নির্দেশনা। বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এমন একাধিক নেতা জানান, দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বেগম খালেদা জিয়া দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া ৫ আগস্টের পর স্বৈরাচারের দোসরদের সম্পদ রক্ষা ও দখলসহ নানা ইস্যুতে দলের স্থায়ী কমিটির দু'একজন নেতার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। তাদের কর্মকাণ্ড নজর রাখতেও নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুশিয়ারি দিয়েছেন। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে চাঁদাবাজী, দখলসহ দলের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয় এমন বিষয়ে দল যে ইতোমধ্যে অবস্থান গ্রহণ তাতে সম্মতিও দিয়েছেন। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে ক্লিন ইমেজের প্রার্থীরা প্রাধান্য পাবেন বলেও জানিয়েছেন একাধিক নেতা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছিল তাদের প্রায় সকলেই ফ্যাসিবাদ সরকারের সময়ে ভোটাধিকার বঞ্চিত হয়েছে। তারা দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক সরকার পাবার আশায় আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। সেই আন্দোলনের সফলতার কারণে ফ্যাসিবাদী সরকার দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। এখন সেই সরকারের পতনের পর সকলের প্রত্যাশা দেশে দ্রুততম সময়ে একটি নির্বাচন হবে, মানুষ ভোট দিতে পারবে এবং গণতান্ত্রিক সরকার পাবে। কিন্তু এতোকিছুর পর যদি আবার নির্বাচন নিয়ে দাবি জানাতে হয় তাহলে বলতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা এটি। আর মানুষ মনে করবে এরাও ফ্যাসিবাদের অনুগামী।

নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি গণমানুষের দল, বিএনপি সব সময় নির্বাচনমুখী দল এবং জনগণের ভোটে ক্ষমায় আসতে চায়। এজন্য দলের নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষের কাছে ছুটে যাচ্ছে। তাদের মন জয় করার জন্য কাজ করছে। দলের নামে যারা অপকর্ম করবে তাদের বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দল ইতোমধ্যে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে। এক্ষেত্রে কাউকেই ছাড় দেয়া হয়নি, আগামী দিনেও কোন ছাড়া দেয়া হবে না।

ফারুক হোসাইন

২০১৪ সালের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন, ২০১৮'র রাতের ভোট এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনে ভোটাধিকার বঞ্চিত হয়েছে দেশের মানুষ। আওয়ামী

নেতাকর্মীদের বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখছেন বেগম খালেদা জিয়া

সরকারের বিরুদ্ধে দেশের মানুষের ক্ষোভের অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে এটিও ছিল অন্যতম। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগকে বিতাড়িত করার পর তাই দেশের মানুষ একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও জানিয়েছেন এবারের নির্বাচন হবে স্মরণকালের

সর্বশ্রেষ্ঠ সুষ্ঠু নির্বাচন। তবে নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য ফুটে উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে চলতি বছর ডিসেম্বর কিংবা আগামী বছরের মাঝামাঝি নির্বাচনের সম্ভব্য সময় হিসেবে জানানো হয়েছে।

আর বিএনপিসহ তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সকল রাজনৈতিক দল যতদ্রুত সম্ভব নির্বাচন দাবি করে আসছে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দলটি ইতোমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছে। নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে নির্বাচন আদায়েও সোচ্চার হয়ে উঠেছে বিএনপি। এলক্ষ্যে ইতোমধ্যে যুগপৎ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের

আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছে। প্রয়োজনে সরকারের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি কর্মসূচিতে যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন এসব বৈঠকে উপস্থিত নেতারা। বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর নেতারা বলেন, বর্তমান সরকার সার্বিক পরিস্থিতি ঠিকভাবে সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এতো দিনেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি সরকার। এছাড়া সরকারের ভেতরে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসরদের কারণে গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ একের পর এক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এছাড়া অনির্বাচিত ও দুর্বল সরকার হওয়ার কারণে নানা ধরণের দাবি-দাওয়া ও আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তো আছেই। তাই বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে দ্রুত একটি নির্বাচন প্রয়োজন।

এদিকে নির্বাচনের দাবির পাশাপাশি বিএনপির হাইকমান্ড ইতোমধ্যে দলের নেতাকর্মীদের যার যার এলাকায় মানুষের মন জয় করতে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদেরও জানিয়ে দেয়া হয়েছে এবার ক্লিন ইমেজের প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেবে বিএনপি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা বলছি প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো দ্রুত শেষ করে যেন নির্বাচন দেয়া হয়। কারণ দ্রুত নির্বাচন হলে অনেক সঙ্কট দূর হয়ে যাবে। নির্বাচন হলে বৃহৎ শক্তি হবে, যে সরকার, পার্লামেন্ট থাকবে সেটি অনেক শক্তিশালী হবে। যে সংকটগুলো সৃষ্টি হয়েছে সেইগুলো দূর হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, নির্বাচনের পরে আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ জাতীয় সরকার করতে চাই, সবাই মিলে রাষ্ট্রের সকল সমস্যার সমাধান আমরা করতে চাই। যারা আমাদের দলে আছেন, অন্যান্য যেসব দল আছেন তারা এটা ভাববেন, চিন্তা করবেন। আমি বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা সমর্থন দিযেছি, সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই আলোচনার মাধ্যমেই এই বিষয়টি এগিয়ে নিতে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ এবং সবার মনে প্রশ্ন আছে ও আলোচিত হচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে- নির্বাচন। কবে নির্বাচন হতে যাচ্ছে? আমাদের পক্ষ থেকে আমরা যেটা বলে আসছি, এই বছরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। অন্য কোনো ভাবনার দিকে না গিয়ে সরাসরি জাতীয় নির্বাচনের দিকে গিয়ে দেশে আগামীদিনে একটা নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য।

তিনি বলেন, অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি দেশ বেশিদিন চলতে পারে না। অগণতান্ত্রিক সরকারের রাজনৈতিক ওয়েট থাকে না, মবিলাইজেশন প্রসেস থাকে না, জনগণের সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকে না। জনগণের কাছ থেকে কোনো ফিডব্যাক পাওয়া যায় না। সুতরাং একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যত তাড়াতাড়ি ফিরে যাওয়া সম্ভব সেদিকে আমরা জোর দিচ্ছি। দ্রুত নির্বাচন ইস্যুতে শরিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে বিএনপি। এসব বৈঠকে জোট ও দলের নেতারাও নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির সাথে ঐক্যমত প্রকাশ করেছে।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের এখন মূল বিষয় হচ্ছে একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা না করলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামা হবে।

অলি আহমদ বলেন, আমরা সংস্কার চাই। তবে সংস্কারের কোনো আলামত দেখছি না। গত ৬ মাসে কোনো দুর্নীতিবাজ, লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। আশানুরূপ সংস্কার কাজে অগ্রগতি না হওয়ায় জাতি হতাশ। জাতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে অনেক কিছু আশা করেছিলো। আমি মনে করি তারা অপারগ। তাদের সেই দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও কর্মস্পৃহা নেই।

প্রথম পৃষ্ঠার পর

জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার বিদায় নিয়েছে সত্য, কিন্তু নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। হাসিনা সরকারের প্রেতাত্মারা এখনো সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিরাজ করছে এবং নানামুখী সমস্যার সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, কতগুলো নন ইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে রাজনীতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেখানে জাতীয় নির্বাচনের বিষয় সামনে আসার কথা, তা না এনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা কেন সামনে আনা হচ্ছে। কার স্বার্থে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয় সামনে আসছে। জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত হলে নতুন করে ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের ডালপালা গজাবে। পতিত স্বৈরাচার আবারও পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে। শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদবিরোধী যে লড়াই আমরা শুরু করেছি সেটা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। এদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। এ ব্যাপারে আমাদের সকল রাজনৈতিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকবে।

তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনোকিছুই সমাধান করতে পারছেন না। সংস্কার করার যোগ্যতা এই সরকারের নেই। তাই অবিলম্বে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা উচিত। জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, জনগণ যা চায় তা বুঝে অবিলম্বে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যেই নির্বাচন দিতে হবে। দলের সার্বিক বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখছেন খালেদা জিয়া: ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ৬ আগস্ট প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এরপর থেকেই তিনি দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সাক্ষাৎ দিতে শুরু করেন। এছাড়া এখন তিনি দেশ ও দলের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজ-খবর রাখছেন। ছেলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের শীর্ষ নেতাদেরকে দিচ্ছেন দিক-নির্দেশনা। বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এমন একাধিক নেতা জানান, দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বেগম খালেদা জিয়া দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া ৫ আগস্টের পর স্বৈরাচারের দোসরদের সম্পদ রক্ষা ও দখলসহ নানা ইস্যুতে দলের স্থায়ী কমিটির দু'একজন নেতার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। তাদের কর্মকাণ্ড নজর রাখতেও নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুশিয়ারি দিয়েছেন। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে চাঁদাবাজী, দখলসহ দলের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয় এমন বিষয়ে দল যে ইতোমধ্যে অবস্থান গ্রহণ তাতে সম্মতিও দিয়েছেন। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে ক্লিন ইমেজের প্রার্থীরা প্রাধান্য পাবেন বলেও জানিয়েছেন একাধিক নেতা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছিল তাদের প্রায় সকলেই ফ্যাসিবাদ সরকারের সময়ে ভোটাধিকার বঞ্চিত হয়েছে। তারা দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক সরকার পাবার আশায় আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। সেই আন্দোলনের সফলতার কারণে ফ্যাসিবাদী সরকার দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। এখন সেই সরকারের পতনের পর সকলের প্রত্যাশা দেশে দ্রুততম সময়ে একটি নির্বাচন হবে, মানুষ ভোট দিতে পারবে এবং গণতান্ত্রিক সরকার পাবে। কিন্তু এতোকিছুর পর যদি আবার নির্বাচন নিয়ে দাবি জানাতে হয় তাহলে বলতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা এটি। আর মানুষ মনে করবে এরাও ফ্যাসিবাদের অনুগামী।

নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি গণমানুষের দল, বিএনপি সব সময় নির্বাচনমুখী দল এবং জনগণের ভোটে ক্ষমায় আসতে চায়। এজন্য দলের নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষের কাছে ছুটে যাচ্ছে। তাদের মন জয় করার জন্য কাজ করছে। দলের নামে যারা অপকর্ম করবে তাদের বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দল ইতোমধ্যে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে। এক্ষেত্রে কাউকেই ছাড় দেয়া হয়নি, আগামী দিনেও কোন ছাড়া দেয়া হবে না।




Post a Comment

0 Comments